জাতির মেধা-মননের প্রতীক দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নিধনের মর্মন্তুদ স্মৃতিঘেরা বেদনাবিধুর একটি দিন।


২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি “শহীদ বুদ্ধিজীবী”-দের সংজ্ঞা চূড়ান্ত করা হয়;সংজ্ঞা অনুযায়ী,

“১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ৩১ জানুয়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত সময়কালে যেসব বাঙালি সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী, রাজনীতিক, সমাজসেবী, সংস্কৃতিসেবী, চলচ্চিত্র, নাটক ও সংগীতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং এর ফলে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী কিংবা তাদের সহযোগীদের হাতে শহীদ কিংবা ওই সময়ে চিরতরে নিখোঁজ হয়েছেন, তাঁরা শহীদ বুদ্ধিজীবী।
১৯৭১ সালে জাতির সূর্য সন্তান বুদ্ধিজীবীরা জাতিকে বুদ্ধি পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়ে আমাদের বিজয়কে দ্রুততম সময়ে নিশ্চিত করেছিলেন।
এসব বুদ্ধিজীবী সহ ৩০ লাখ শহীদ ও অসংখ্য নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি প্রিয় মাতৃভূমি।

উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/
ভয় নাই ওরে ভয় নাই/
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমর পঙ্ক্তির চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জাতি আজ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে শ্রদ্ধাবনত হবে।

◽১৯৭১ সালে বছরব্যাপী পাকিস্তান সেনাবাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। পরিকল্পিতভাবে ১৪ ডিসেম্বরে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়েছিল।

◽বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এই দিনকে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ ঘোষণা করেন।

◽ঊনিশশ’ একাত্তর সালের ডিসেম্বরের চতুর্দশ দিবস হানাদার মুক্ত হয় জয়পুরহাটের পাঁচবিবি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোরের

◽কেশবপুর, চট্টগ্রামের দোহাজারী সহ অনেক এলাকা।
ফুলে ফুলে ছেঁয়ে যাবে তাদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ।

২৫ মার্চ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ শুরুর পর থেকেই অবশ্য তারা বেছে বেছে কিছু মানুষকে হত্যা করে যারা বিবেচিত হতেন দেশের অসাধারণ নাগরিক বলে। মুক্তিযুদ্ধের গোটা সময়টায় বিভিন্ন জেলা শহরে দেশীয় অনুচরদের সহায়তায় হত্যা করা হয় তাদের। তাদের অপরাধ ছিল নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনসাধারণকে স্বাধিকারের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে তোলা ও মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা জোগানো।

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতির যে সূর্য সন্তানদের আমরা হারিয়েছি সে ক্ষতি আজও কাঁটিয়ে উঠতে পারিনি। যে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীরা জীবনের মায়া তুচ্ছ জ্ঞান করেছেন, সেই দেশপ্রমে উজ্জীবিত হয়ে একটি সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন প্রজন্মকে অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে হবে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বিনয় এবং গভীর শ্রদ্ধায় মুক্তিযুদ্ধের অগ্রসৈনিকদের স্মরণ ও তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

লেখক -রাজু আহমদ
প্রধান শিক্ষক
মহাকাল মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়
চেঙ্গুটিয়া, অভয়নগর, যশোর।